জ্বলছি, শুধু জ্বলছি।
জন্ম হতেই কেউ আমাকে জ্বালিয়ে দিল ।প্রথমে উজ্জ্বল বড় শিখা হয়ে জ্বলে ধীরে ধীরে নিজের মতো জ্বলছি ।মাঝে মাঝে বাতাস এসে দোলা দিয়ে যায় ।বুকটা কেমন কেঁপে ওঠে ।আমাকে জ্বলে যেতে হবে তাই বাতাসের আহ্বানে সাড়া দিলাম না ।একটু দোলাচল হয়ে আবার জ্বলছি ।কিছু কিছু দমকা বাতাস আছে যারা বড়ই উদ্ধত।পারিনা এড়াতে ।আমাকে নিভিয়ে দিয়ে যায়। জ্বলা যার জন্মগত অধিকার সে কি করে নিভে যাওয়া কালো সলতে নিয়ে বসে থাকবে ?বুকে জ্বলে ওঠার তীব্র আকাঙ্ক্ষা নিয়ে অপেক্ষা শুধু অপেক্ষা। যাদের জ্বালানো স্বভাব তারা এসে আবার জ্বালিয়ে দিল। আবারও জ্বলছি।
শুভদিনে জ্বলে উঠি। নিজেকে ধন্য মনে হয় ।মনে হয় কারো মঙ্গলের জন্য নিজেকে জ্বালিয়ে পুণ্য করছি। নিজের জ্বলা সার্থক। ও মা কিছুক্ষণ পরে আমাকে নিভিয়ে দেয় !আমি কালো মুখে দাঁড়িয়ে ভাবি আমাকে শান্ত না করলে বোধহয় তার জীবনটা ভালো কাটবে না। হয়তো বুঝেছে কাউকে জ্বালিয়ে নিজে ভালো থাকা যায় না। নিভিয়ে দিলেই তো আর আমার গায়ের জ্বালা মিটছে না। উশখুশ করতে থাকলাম ।প্রচন্ড ছটফট করতে করতে আমি জ্বললাম কারো চাওয়া চাইতে।দেবতার পায়ে নিজেকে উৎসর্গ করে দিলাম ।যাতে করে জ্বলতে জ্বলতে আমি নিঃশেষ হওয়ার পর তার ইপ্সিত কামনা বাসনা গুলো পেয়ে খুশি হয় ।নিজেকে শেষ করে অন্য কাউকে কিছু পাইয়ে দেওয়ার আনন্দই আলাদা।
এবার জ্বললাম কোন সন্ধ্যায় বদ্ধ কেবিনের ভেতরে। এই জলার মধ্যে কোন শান্তি নেই। আমি জানি এর পরিণতি কি হবে। তবুও অন্ধকার কে স্পর্শ করার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত আমাকে নির্লিপ্ত ভাবে জ্বলতে হবে। মৃদু উষ্ণতায় সুখানুভূতি,প্রেমানুভূতি জাগিয়ে তোলার দায়িত্ব আমার ।খাওয়া দাওয়া, ভালোবাসার গুঞ্জন তুলে যখন জোড়া ওষ্ঠাধর তরঙ্গ তুলছে তখন কেউ যেন আমাকে গোলাপ ছুঁড়ে মারল।নিভছি না দেখে আমার টুটি চেপে ধরেছে ।সব জানা সত্ত্বেও দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়া আর কিছুই করতে পারলাম না। আমি জ্বলতে চাই আবার।
আবার আমি জ্বললাম মধ্যরাত্রিতে ।ভীষণভাবে ,ভয়ংকর ভাবে। ইলেকট্রিকের রঙিন আলোতে ভরা সমাজে অসংখ্য আমি জ্বলছি দাউ দাউ করে। এক আকাশ তারার নিচে আমি জ্বলছি। কয়েকটা অবিকৃত লালসাকে পাশ কাটিয়ে স্হির , অচঞ্চল জলন্ত শিখা নিয়ে হেঁটে যাচ্ছি শহরের গ্রামের অলি গলি। মনে হচ্ছে এই হাঁটা আজকের নয়, দীর্ঘদিন ধরে আমি হাঁটছি এভাবে ।আজ আমি ক্লান্ত নই,নই আমি গলে যাওয়া নরম মধূত্থ।যত অপমান ,লজ্জা ,খেদ, অবিচার সব শেষ হোক আমি জ্বলে ওঠাতে। আমি এমনি করে চলতে চাই সারাজীবন, সারাক্ষণ।