_”একটু শান্তি ভিক্ষে দিবে গো ,একটু স্বস্তি ভিক্ষে দেবে...…. “
ভক্তের আকুতি শুনে একটা পোড়ো জীর্ণ মন্দিরের আধভাঙ্গা দরজা খুলে গেল স্বশব্দে ।
শ্যাওলা ধরা মন্দিরের গায়ে অসংখ্য গাছ-গাছালি। কোথাও পাখির বাসা আবার কোথাও ঝড়ে উড়ে আসা খড়কুটো। মন্দিরের দরজা খুলে যেতেই এক বৃদ্ধ সাদা পেঁচা উড়ে এসে বসলো অতি ভগ্ন এক দেবী মূর্তি পায়ের পাতায়। কর্মব্যস্ত মাকড়সা চঞ্চল চোখে একবার তাকালো মাত্র ।বিশাল ফাটল যুক্ত চাতালে ভক্ত তার শরীরটা শুয়ে দিয়ে তাকিয়ে আছে দেবী মূর্তির দিকে। ক্লান্ত অর্ধ উন্মেলিত চোখে বলছে-” শান্তি দাও।”যে চোখে এতদিন ঘুম আসতো না আজ কোন রকম ওষুধ ছাড়াই ঘুম আসছে ।দেবী কথা শুনেছেন!
ঘুমের মধ্যে ভেসে উঠছে অতীত ।একটু শান্তি একটু ভালোবাসা একটু স্নেহের জন্য কত বড় বড় মন্দিরের দরজায় ভিক্ষে করেছে। কতবার বলেছে-” আমার দিকে তাকাও, আমাকে ভালবাসো, স্নেহ করো ।কেউ ঠকবে না।আমি জ্ঞান থাকতে কাউকে ঠকাব না।” সব দুদিনের ছল।আরো ভেসে উঠেছে- পথ চলতি জীর্ণ ভগ্ন প্রায় ছোটো মন্দির দেখে অবজ্ঞায় মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। ভেবেছে ওই তো মন্দির, ওর অত ক্ষমতা নেই যে আমাকে শান্তি -প্রেম দেবে ।কি অহংকার, কি অজ্ঞতা!
গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন শরীর শীতল জলের স্পর্শে জেগে উঠল। ভক্ত পরম শান্তি নিয়ে চোখ মেলে তাকাতেই দেখল এক দেহাতি অতি সাধারণ মেয়ে হাতে নৈবেদ্য, জল নিয়ে বসে ।ভক্ত জিজ্ঞাসা করল -”কে তুমি?” মেয়েটি হেসে বলল -”আমি প্রতিমা।”
দীর্ঘ পথ চলার ক্লান্তি আর নেই ।মনের জটিলতা জট ছাড়িয়ে ঝরনা হয়ে ঝরে পড়ছে ।ভক্ত বুক ভরা নিঃশ্বাস আর প্রাণ খোলা হাসি হেসে বলল-” গুপ্তধনের ঘড়া ঘড়া ভালবাসা ,বাক্স বাক্স শান্তি , ললন্তিকা প্রেম পোঁতা থাকে বিলাসিতাহীন , বাহুল্য বর্জিত অতি তুচ্ছ স্থানে ।সবাই তার সন্ধান পায় না।”