আজ সারাদিন খাওয়া হয়নি।
২নং আপ লোকাল পেসেঞ্জার ট্রেনে, আপাতত ফাঁকা কামরায় ভারী ব্যাগটা রেখে সোনাদা বসে পড়ল।সোনাদার এই এক হয়েছে জ্বালা।অভ্যাস না মনুষ্যত্ব কেউ বুঝতে পারে না। আস্ত খান দুয়েক সিট ফাঁকা তবুও দরজার কাছে বসা চাই।সোনাদা মনে করে পরের স্টেশনে বাচ্চা, বুড়ো, ভদ্র মানুষ জনেরা উঠবে, তারা বসবে ক্ষন। তাছাড়া,সিটে আরাম করে বসে তো আর হকারি করা চলে না। চুলকানি,দাদ, হাজার মলম বোঝাই করা ভারী ব্যাগটা নিয়ে ঘুরে ঘুরে ডান কাঁধটায় কড়া পড়েছে।পিঠের টানটাও বেড়েছে।
আরে বাবা এখন চুলকানি হলে মানুষ জনেরা সারাদিন বসে বসে চুলকোবে কিন্তু কেউ মলম কিনে লাগাবে না। সোনাদা অবশ্যই এর কারণ অনুসন্ধান করেছে। মানুষের কাজকর্ম নেই,সব নাকি পার্টটাইম জব।তাই মানুষ জনেরা ফাঁকায় না থেকে চুলকানিকে নিয়ে এসে নিভৃতে বিজনে মন সন্তুষ্ট করে চুলকানি উপভোগ করে।
সোনাদা সোনা মুখ করে সুরে সুরে বলে -আপনারা কি জানেন পৃথিবীর মানচিত্রে নীলের বদলে ধূসর রং ধরেছে।মর্তের পলেস্তারা খসে খসে জমা হচ্ছে পাতালে। ঐতিহাসিক স্থানে স্থানে হলুদ ছোপের ওপর কিসের ট্রেড মার্ক লেগেছে। দাদারা, আসুন আমরা সমাজের থুড়ি শরীরের দাদ ,হাজার, চুলকানির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই।
সোনাদার কথা কেউ শোনে না। উল্টে গম্ভীর গলার দাদারা বলেছেন -ভীড় ট্রেনে পা রাখতে পারছি না!ঐ উনি এলেন সমাজ সেবা করতে। জনসংখ্যা কমাবার মলম আনুন না মশাই।ট্রেনটা অশ্লীলতার ঝিকঝিক হাসি হাসতে হাসতে আমুদে গতিতে চলতে লাগল। সোনাদা উত্তরে বলেছে -দোহাই দাদারা, আপনারা চুলকোন;যত পারেন চুলকোন। চুলকে চুলকে গ্ৰহান্তর হন তবে জনসংখ্যা কমাবেন না।বিক্রিবাট্টা বন্ধ হয়ে যাবে যে! ট্রেনের পেট খালি করবেন না।
কিছুদিন হল মোটেও বিক্রি হচ্ছে না।যেটুকু রোজগার হয় তাতে ঘরের চাল থেকে পেটের চাল ভাবলে জীবনের হালচাল নির্জলা উপবাসের মতো। দরজার পাশে বসে সোনাদা ভাবছে মানুষ কেমন বদলে গেছে।বদলটা কি হঠাৎ হলো! নাকি তার ব্যবসা বদলানো উচিত ছিল! কিন্তু জব স্যাটিফেকশন বলে একটা কথা আছে তো নাকি?অন্য লাইনের আঁট ঘাট ও জানা নেই।এক লাইন ছেড়ে অন্য লাইনে যাওয়াটা বড় ঝক্কির কাজ।
পরের স্টেশনে ট্রেন থামার সঙ্গে সঙ্গেই হুড়মুড়িয়ে লোক উঠে পড়ল।কত কিছুই না কিনছে,কত কিছুই না খাচ্ছে। একজন লোক খাবার কিনে দাঁড়িয়ে পড়ল সোনাদার গা ঘেঁষে। বোধহয় লোকটার খেতে খেতে গল্প করার অভ্যাস আছে। সোনাদার সাথে গল্প জুড়ে দিল। নানান কথা। এদিকে সোনাদার পেটের ভিতরে কে যেন পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে ভিজে গামছা নিঙড়াছে।না, পেটে কিছু একটা না দিলে আর চলছে না। পকেট হাতড়ে দু-এক পয়সা আছে কি না দেখতে যাবে হঠাৎ লোকটা সোনাদাকে বললেন -এই যে দাদা এঁটো খাবারের প্যাকট টা বাইরে ফেলে দিন তো। এঁটো খাবারের প্যাকট টা হাতে নিয়ে সোনাদার চোখ জোড়া ছলছল করে উঠল। চোখ দুটো হয়ত বলছে -মানুষ তার কাঠামো নিয়ে ঠিকই আছে।ক্ষয়ে যাচ্ছে মূল্যবোধ,দৃষ্টিভঙ্গি,ভাবনা।