বোকা পাখি

 আজ সরস্বতী পুজো।

স্কুলের গেটের কাছে লাল হলুদ রঙের শাড়ির আঁচল টা উড়তে দেখে সায়র নিজের পাঞ্জাবিটা গলার দিকে টেনে নিয়ে ঠিক করে নিল। সেই কতক্ষন থেকে অপেক্ষা করছে ।এই আসার টাইম হলো! ওদিকে দুটো রাউন্ড পুষ্পাঞ্জলি শেষের পথে ।খিদে না ,খিদে পাচ্ছে না।


আজ সায়র গুঞ্জাকে বলবে কত না সমুদ্র তোলপাড় করে মুক্তো
এনেছে, কত না দেখার মাঝে একটা দেখা এই গুঞ্জা। মাথা ভর্তি কোঁকড়ানো চুল, শ্যামলা গালে আভিজাত্যের লাল তিল। সুচিস্মিতা এই গুঞ্জা ক্লাস টপার ।সায়র কখনো লাস্ট বেঞ্চি টপকে ফার্স্ট বেঞ্চে আসতে পারিনি। বলা ভালো চেষ্টা করেনি। তবে চেষ্টা করে গুঞ্জাকে মনের খুব কাছে এনে রেখেছে। ক্লাস নাইনে পড়া ছেলেটা ভেবে ফেলেছিল অনেক কিছু। গুঞ্জাকে মনের শ্রেষ্ঠ স্থানে বসিয়ে বলে ফেলেছে সারা জীবনের ফর্দ ।গুঞ্জা পৃথিবীর একমাত্র শক্তি যে শক্তি পৃথিবীর মঙ্গল ছাড়া অমঙ্গল করে না। সারাদিন ভাবে রূপকথা-উপকথা ।শুধু ভাবে ।
হঠাৎ লক্ষ করলো গুঞ্জা স্কুলের ভেতরে আসছে কিন্তু তার হাতটা ধরা আছে আরো একটা হাতে । এই হাতটা সায়র চেনে। রোজ বিকেলে খেলার মাঠে ক্রিকেট ব্যাট ধরে,পাড়ার অনুষ্ঠানে আয়োজন করে , অকারণে ডেস্ক বাজিয়ে গান করে আবার ছুটে যায় বিপদে সাহায্যের জন্য।এই হল টুয়েলভের সুমনদা। কোথা থেকে কুয়াশা এসে ভীড় করলে সায়রের চশমায়।সায়রের চোখ ভালো ; চশমার দরকার নেই।গুঞ্জা চশমা পরা ছেলে পছন্দ করে বলে চশমাখানা কিনেছে।সায়র দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কী যেন ভাবার চেষ্টা করছ।চেনা, বড্ড চেনা কিছু।
সায়রের মনে পড়েছে ,সেই দুপুরের পাখিটাকে ।যে প্রতি দুপুরে একটা বন্ধ কাঁচের জানলার সামনে বসে থাকত। সে ভাবত ওর সামনে আরো কেউ আছে। নিজের প্রতিবিম্বের উপরে মাঝে মাঝে ঠোঁটের আলতো স্পর্শ ও বুলিয়ে দিত ।ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতো ।পাখিটা কতটা একা ছিল কতটা বোকা ছিল সায়র আজ হৃদয় দিয়ে বুঝেছে।

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Ok, Go it!